প্রশ্নবিদ্ধ স্বাধীনতা

আমরা স্বাধীন দেশের মানুষ....জন্মেছি স্বাধীনতার প্রায় ২৭ বছর পর। ১৯৭১ সালের বঙ্গবন্ধুর সেই রক্তে আগুন জ্বালা ভাষন শুনেছি হাজার বারের বেশি।ইতিহাস পড়েছি অনেকবার। কত রক্ত আর কত ইজ্জতের বিনিময়ে পাওয়া আমাদের এই স্বাধীনতা। বর্তমান সময়ে কি সত্যি স্বাধীনতা নামক কোন বস্তু এই সোনার বাংলায় আছে???নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করেছি অনেকবার। উত্তর খুজে পাইনি... যা খুজে পেয়েছি তা নিজেকে শুধু ধিক্কার জানানোর  কারণ।
ছোট বেলার সেই  তিন তারকা বিশিষ্ট  ইমপর্টেন্ট ভাব সম্প্রসারণ কথা সবার হয়তো মনেই আছে..
"স্বাধীনতা  অর্জনের চেয়ে স্বাধীনতা রক্ষা করা কঠিন।"
কথা টা কোন মহান ব্যক্তি বলেছিল তা জানা নেই।তবে সে স্বাধীন বাংলাদেশের সুদূর ভবিষ্যৎ আগেই অনুধাবন  করতে পেরেছিলেন নিশ্চয়। আজ কাল স্বাধীনতা শুধু বইয়ের পাতা আর ইতিহাসেই খুজে পাওয়া যায়।সরজমিনে এই শব্দের কোন অস্তিত্ব নাই।
যদি অস্তিত্ব থাকতোই.. তাহলে ফেসবুক নিউজ ফিডে, পত্রিকার হেডলাইনে দৃষ্টিকটু ভাবে চোখে পরতো না কোন এক যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ভিক্ষা করছে,রিক্সা চালাচ্ছে,রাস্তায় রাত কাটাচ্ছে কিংবা মৌলিক চাহিদার অভাবে মারা যাচ্ছে।
এইসব দেখার জন্যই কি জীবন কে তুচ্ছ করে ঝাপিয়ে পরেছিল দেশকে স্বাধীনতা এনে দেওয়ার জন্য?
বাংলাদেশ এ মুক্তিযোদ্ধাদের কতই না সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। সকল ক্ষেত্রে তাদের জন্য নির্ধারিত কোটা ব্যবস্থা।শুধু মুক্তিযোদ্ধার ছেলেই নয় এই সু্যোগ তাদের প্রজন্মের পর প্রজন্মে ভোগ করছে। কিন্তু যারা এই সুযোগ নিচ্ছে তাদের কয়জন সত্যিকারের মুক্তিযোদ্ধা তা নিয়ে আমার বিকট সংশয় আছে।হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধা যারা জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছেন তাদের নাম নেই এই মুক্তিযোদ্ধার তালিকায়। নাম আছে সেই সব সুযোগসন্ধানী মানুষদের যারা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসটুকুও অজানা।
কয়দিন যাবত কোটা সংস্কারের দাবিতে ছাত্ররা রাস্তায় নেমেছে।
নামবেই তো..... এই কোটা পদ্ধতি তো কেড়ে নিচ্ছে তাদের স্বাধীনতা। জন্মের আগেই আমাদের বাবা মাও ঠিক করে রাখে ছেলে ডাক্তার হবে না ইঞ্জিনিয়ার। তাহলে জন্মাবার পর আমরা স্বাধীনতা পেলাম কই???
তবে স্বাধীনতা আছে বৈকি....
যেসব ছেলেদের মুখ থেকে এখনো তাদের মায়ের বুকের দুধের গন্ধ যায়নি,লুঙ্গি পরে ঘুমালে রাতে লুঙ্গিটার ঠিক থাকে না,উত্তর দক্ষিণ পূর্ব পশ্চিম ছাড়া যে আরো ছয়টা দিক আছে সেগুলো তারা জানে না।
অথচ
তারাও আজ হাটু গেঁড়ে বসে হাতে গোলাপ নিয়ে ফিল্মি ষ্টাইলে  স্বাধীন ভাবে প্রেম নিবেদন করে।
যে কচি মেয়েটার এখনো পিরিয়ড শুরু হয়নি,শুরু হলেও যে মেয়েটার এই বয়সে পিরিয়ডের ব্লাড দেখে ভয়ে চিৎকার করে উঠার কথা,এখনো পায়জামার ফিতাটা ঠিক মতো বাধতে পারে না সেই মেয়েটা আজ একটা ছেলেকে বুকে জড়িয়ে ধরছে আর প্রকাশ্যে চুমু খাচ্ছে।
ভাবতে পারেন দেশ কতোটা স্বাধীনতা পেয়েছে?
এরাই সেই প্রজন্ম, যারা অপারেশান সার্চ লাইট কি জানেনা।জানেনা স্বাধীনতা দিবস কবে।জানেনা ভাষা দিবস কবে।জানেনা ভাষা শহীদদের নাম।জানেনা মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কয়টি ছিল।জানেনা জাতীয় সঙ্গীতের রচয়িতার নাম।
জানেনা রণসঙ্গীতের রচয়িতার নাম!এরা জানেনা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী,শেরে বাংলা ফজলুল হক,মওলানা ভাষানীর নাম।
সবই স্বাধীনতার উদাহরণ....
সুখ বা শোকদিবস দুটই এখন এই দেশে বাণিজ্যিক হায়নার খাদ্য।২১ ফেব্রুআরি ১৬ ডিসেম্বর আর ১৪ ফেব্রুআরির মধ্যে কোন অমিল খুজে পাবেন না এই স্বাধীন বাংলায়। সবদিনই তো আনন্দময় ছুটির দিন। এই দেশে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়,২১ শে ফেব্রুয়ারিতে ভাষার জন্য জীবন দেওয়া সালাম রফিক বরকত দের সন্মান দেখানোর জন্য আয়োজন করা হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আর সেই অনুষ্ঠানেই হাসি মুখে গাওয়া হয় হিন্দি গান।
এটাই তো স্বাধীনতা।
কনসার্ট, কনফারেন্স,সেমিনার এমনকি সংসদ অধিবেশন ও এখন স্পোন্সারড।স্বাধীনতা দিবসে সার্বজনিন পুরষ্কার বিতরনি অনুষ্ঠানে লাখ টাকার আতশ বাজি ফাটে.. আর সেই অনুষ্ঠানেই গলায় প্লে কার্ড লাগিয়ে  ভিক্ষা করে যুদ্ধাহত এক মুক্তিযোদ্ধা।যে মানচিত্রের সীমানা ৩০ লাখ শহীদের রক্ত কালিতে আকা সেই সীমানায় আজও রক্ত ঝরে.. যেই সার্বভৌমত্বের বড়াই করে বলি আমরা বাংলাদেশি সেই সার্বভৌমত্ব কেনাবেচা হয় আন্তঃজাতিক মিমাংসার টেবিলে।
এই জন্যই কি দেশ স্বাধীন করেছি বীর শহিদরা???
এই স্বাধীনতার স্বপ্নই কি দেখেছিলেন বঙ্গবন্ধু????
দেশমাতার কাছে চিঠি...
মা,জানি তুমি ঘুমাওনি।কেন না তোমার বুকের উপর ২৪ ঘন্টাই চলে অর্থনীতির চাকা।
জানি তুমি মমতাময়ী।একটু আকতি নেই তোমার মনে।
আচ্ছা মা তোমার কি একবারও মনে হয় না যে এই অস্তিত্বের কোন মানে নেই,এই ঘর ঠিকানাবিহীন!
তোমার কি মনে হয় না আতুর ঘরেই লবন দিয়েই শেষ করে দেওয়া উচিত ছিল তোমার এই পথভ্রষ্ট সন্তানদের!
আমার তো মনে হয় ছোট খাচা থেকে মুক্ত হয়ে আরো বড় খাচায় এলাম। এখনো সেই স্বাধীনতা নামক জেলখানাতেই আছি।
মা,৯ মাস অবিচল ধৈর্য্য, উত্তাল বেদনার পরই তো তুমি মা। সেই সময়ের যে শিশু উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ এর স্বপ্ন দেখতো নাম মাত্র স্বাধীনতার ফাদে পরে আজ সে লাগামহীন। বেহায়াপনা তার শিরা উপশিরায়।দু দশক আগেও হয়তো একে দুষ্টামি বলা যেত কিন্তু এখন নষ্টামি বলা ছাড়া আর কোন পথ দেখছি না।
যাদের রক্তের বিনিময় আমরা তোমায় পেলাম তাদের রক্তে ভেজা শার্ট জাদুঘরে না থেকে ঔ শার্টের এক ফোটা রক্ত যদি আমাদের হৃদয়ে থাকতো তাহলে দেশে কোন মুক্তিযোদ্ধা মৌলিক চাহিদা বঞ্চিত হয়ে মরতো না।ভিক্ষা বা রিক্সা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেতে হতো না। অনাথ আশ্রম বা বৃদ্ধাশ্রম নামক কোন বস্তু এই বাংলায় থাকতো না।দূর্নীতি তে চ্যাম্পিয়ন তো দূরের কথা দূর্নীতি  নামক শব্দের অনুপ্রবেশই ঘটতো না এই সোনার বাংলায়।
জেলখানাতেই আছি মা.... জানি না আর কত দিন থাকতে হবে এই স্বাধীনতায়। জেলখানা থেকেই লিখছি... এখান থেকেই পোষ্ট করবো।
চিঠি পেলে উত্তর দিও....

Comments

Popular posts from this blog

অভিমানী ছোট বোন

গর্বিত ব্যাকব্রেঞ্চার

মানবতার আর্তনাদ