গর্বিত ব্যাকব্রেঞ্চার
বাবার চাকরির সুবাদে বছরের পর বছর স্কুল পালটাতে হয়েছে আমায়। বাবা ট্রান্সফার হয়,সাথে সাথে আমারও তল্পিতল্পা গুটিয়ে যাত্রা করতে হয়েছে নতুন কোন এক গন্তব্যে। ৫ম শ্রেণি থেকে ৮ম শ্রেণী পাশ করতে স্কুল বদলাতে হয়েছিল ৪ টি। অবশেষে বাবা বোধ হয় একটু হাপিয়েই গিয়েছিল। চাকরি ছেড়ে দিয়ে সরাসরি নিজ গ্রামে। আমি ছাত্র হিসাবে খুব ভাল ছিলাম তা বলবো না, তবে একদম গাধা মার্কাও না।
যাই হোক নিজের গ্রামের আশে পাশের স্কুল অপেক্ষা ভাল স্কুলে ভর্তি হলাম। যা আমার বাসা থেকে প্রায় ৬ কি.মি দূরে। ক্লাশে একশোর বেশি ছাত্রছাত্রী ছিল।কিন্তু অনেক দিন খেয়াল করে দেখলাম কিছু কিছু ছাত্রের প্রতি স্যার ম্যাম রা একটু বেশিই যত্নশীল।হ্যা,সেই ছাত্ররাই ক্লাশের মেধায় প্রথম স্থানীয়।
একদিন আমি প্রথম সারির ব্রেঞ্চে বসেছি।আর ক্লাশের সেকেন্ড বয় দেড়িতে আসায় বসেছে পিছনে।। স্যার ক্লাশে এসে ওকে পিছনে দেখে কি যেন ভাবলো। তারপর হাজিরা নেওয়া শুরু করলো।হাজিরা শেষে আমায় বলল পিছনে যেতে আর সেকেন্ড বয় কে ডেকে সামনে বসালো।সেই যে প্রথম ব্যাক ব্রেঞ্চে বসা শুরু।তারপর থেকে আগে গেলেও কখনো সামনে বসতাম না।কয়েকদিন পিছনে বসে বসে ব্যাক ব্রেঞ্চের সাথেও দারুন সম্পর্ক হয়ে গিয়েছিল।আর কখনো সামনে বসার ইচ্ছাও করেনি আমার।
আমরা কোন ভাল কাজের কথা বললেও স্যাররা খুব একটা কানে তুলতো না আর ভাল ছাত্রদের সামান্য কথাতেই স্যারদের তৎপরোতা বেড়ে যেতো। আমাদের মূল্যায়ন স্যারদের কাছে ছিল না বললেই চলতো।আমরা আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতাম ভাল রেজাল্ট করার।
এভাবেই এস এস সি টা পাশ করলাম। প্লাস আসেনি। জিপিএ 4.65 অর্থাৎ A গ্রেড। অনেকেই প্লাস পেয়েছে। স্কুলে গিয়ে দেখি প্লাস প্রাপ্ত প্রথম সারির ছাত্রছাত্রীদেরা নিয়েই আনন্দ উল্লাসে মেতে আছে সকল স্যার ম্যামরা।যেন মনে হচ্ছিল ওরাই স্যার দের ছাত্র আমরা কিছুই না।
আমি আমার স্যার ম্যামদের সন্মান করি।তারাই আমাদের আদর্শ। তাদের কাছে আমার অনুরোধ..
দোয়া করে ছাত্রছাত্রী দের মাঝে কোন বৈষম্য সৃষ্টি করবেন না। মেধা আল্লাহতালা সবাই কে সমান দেয় না। সবাই তো আর প্লাস পাবে না।
কিন্তু একজন ছাত্র প্লাস পেল না বলে সে কি আপনার ছাত্র নয়?
সে কি কোন শিক্ষা পেল না?
সে কি শিক্ষিত হলো না?
শিক্ষা কাকে বলে স্যার.?
ধরুন আপনি রোদে হেটে হেটে স্কুলে যাচ্ছেন।আপনার পাশে এসে এক এসি মাইক্রো দাড়ালো। জানালার কাচ টা নামিয়ে সালাম দিয়ে বললো স্যার কেমন আছেন। আপনি খুব সহজেই চিনতে পেরেছেন সে আপনার কোন এক ব্যাচের ফাস্ট বয় গোল্ডেন প্লাস পাওয়া ছাত্র রবিন।আজ সে অনেক বড় চাকরী করে। গাড়ি থেকে না নেমেই হাজার টাকা আপনার হাতে জোড় করে ধরিয়ে দিয়ে বলছে.. স্যার ভাল থাকবেন।আসি।
আবার তারপর দিন আপনি একি ভাবে স্কুলে যাচ্ছেন।সামনে থেকে একটা রিক্সা এসে আপনার সামনে দাঁড়ালো।রিক্সা চালক আপনাকে সালাম দিয়ে কেমন আছেন তা জানতে চাইলো ..আপনি খুব কষ্ট করে তাকে চিনতে পারলেন যে সেও রবিনের ব্যাচেরই ছিল কিন্তু ব্যাক ব্রেঞ্চের। লেখাপড়াতে তেমন ভাল ছিল না বলে আজ সে রিক্সা চালক।তারপর রিক্সা থেকে বস্তা জাতীয় কিছু নিচে নামিয়ে রেখে আপনাকে বলছে.. স্যার আপনি এত্তো রোদে স্কুল পর্যন্ত হেটে যাবেন, খুব কষ্ট হবে আপনার। আসুন আপনাকে নামিয়ে দেই।আপনার মত না থাকা সত্তেও আপনাকে জোর করে রিক্সায় তুলে নিয়ে স্কুলে নামিয়ে দিল।আপনি শত চেষ্টা করেও তাকে ভাড়া নেওয়াতে পারলেন না।
দুইটি ঘটনার পর আপনাদের কি মনে হয় স্যার... A+ পেলেই কি সে শিক্ষিত?
সন্মানিত শিক্ষক শিক্ষিকা গণ.. আপনার বিপদে সবার আগে সেই অবহেলিত ব্যাক ব্রেঞ্চের ছাত্ররাই আগে আসবে।আপনাদের সেই আদরের ফাস্ট ব্রেঞ্চে বসা কোন ছাত্র কে পাবেন না। এস এস সি পার করেছি প্রায় ছয় বছর আগে। অনেক দেখেছি।সেই অভিজ্ঞতা থেকেই বলছি..
স্যার,যদি বলা হয় আপনার একটা কিডনি দরকার। না হলে আপনি বাঁচবেন না। তাহলে হয়তো আপনার আদরের ফাস্ট বয় রা টাকা দেবে আপনাকে অনেক।কিন্তু কিনডি খুজে দিবে না। কারন তাদের হাতে ওত সময় নেই। কিন্তু আপনার এই খবর শুনে আপনার ক্লাসের ব্যাক ব্রেঞ্চে বসা কোন অবহেলিত ছাত্র নিজেই তার কিডনি দান করতে রাজি হয়ে যাবে।
স্যার,যদি আপনি বাসে কোথাও যান... তখন আপনার অনেক ছাত্রই আপনার জন্য সিট ছেড়ে দেয়। একটু লক্ষ করে দেখবেন তারা অধিকাংশই ব্যাক ব্রেঞ্চের অবহেলিত ছাত্র।
স্যার,যদি আপনার জন্য কখনো রক্তের দরকার হয়.. তখন আপনার অনেক ছাত্রই ছুটে যাবে রক্ত দিতে। লক্ষ করে দেখবেন তাদের মধ্যে আপনার প্রিয় ফাস্ট ব্রেঞ্চের ছাত্রের মুখ থাকবে না। থাকবে সেই অবহেলিত ব্যাক ব্রেঞ্চার।
তবে নিজেকে সেই ব্যাক ব্রেঞ্চার ভাবতে খুব গর্ব হয়। চাই না আমি সেই প্লাস ডিগ্রিধারী শিক্ষা যে শিক্ষায় শুধু ভাল রেজাল্ট,বড় বড় পদে চাকরি আর বিপুল টাকা পয়সাই থাকে।থাকে না কোন মানবতা,ভক্তি শ্রোদ্ধা আর মানুষের জন্য ভালবাসা।
স্যার... তবুও আপনাদের প্রতি অনেক ভালবাসা আর কৃতজ্ঞতা।আজ জীবনে এতো দূর আসছি তা আপনাদের থেকে পাওয়া শিক্ষা আর দোয়াতেই। আপনাদের কাছে আমরা আজীবন ঋণী।
#আতিকুল ইসলাম লিপু ...... ব্যাকব্রেঞ্চার
যাই হোক নিজের গ্রামের আশে পাশের স্কুল অপেক্ষা ভাল স্কুলে ভর্তি হলাম। যা আমার বাসা থেকে প্রায় ৬ কি.মি দূরে। ক্লাশে একশোর বেশি ছাত্রছাত্রী ছিল।কিন্তু অনেক দিন খেয়াল করে দেখলাম কিছু কিছু ছাত্রের প্রতি স্যার ম্যাম রা একটু বেশিই যত্নশীল।হ্যা,সেই ছাত্ররাই ক্লাশের মেধায় প্রথম স্থানীয়।
একদিন আমি প্রথম সারির ব্রেঞ্চে বসেছি।আর ক্লাশের সেকেন্ড বয় দেড়িতে আসায় বসেছে পিছনে।। স্যার ক্লাশে এসে ওকে পিছনে দেখে কি যেন ভাবলো। তারপর হাজিরা নেওয়া শুরু করলো।হাজিরা শেষে আমায় বলল পিছনে যেতে আর সেকেন্ড বয় কে ডেকে সামনে বসালো।সেই যে প্রথম ব্যাক ব্রেঞ্চে বসা শুরু।তারপর থেকে আগে গেলেও কখনো সামনে বসতাম না।কয়েকদিন পিছনে বসে বসে ব্যাক ব্রেঞ্চের সাথেও দারুন সম্পর্ক হয়ে গিয়েছিল।আর কখনো সামনে বসার ইচ্ছাও করেনি আমার।
আমরা কোন ভাল কাজের কথা বললেও স্যাররা খুব একটা কানে তুলতো না আর ভাল ছাত্রদের সামান্য কথাতেই স্যারদের তৎপরোতা বেড়ে যেতো। আমাদের মূল্যায়ন স্যারদের কাছে ছিল না বললেই চলতো।আমরা আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতাম ভাল রেজাল্ট করার।
এভাবেই এস এস সি টা পাশ করলাম। প্লাস আসেনি। জিপিএ 4.65 অর্থাৎ A গ্রেড। অনেকেই প্লাস পেয়েছে। স্কুলে গিয়ে দেখি প্লাস প্রাপ্ত প্রথম সারির ছাত্রছাত্রীদেরা নিয়েই আনন্দ উল্লাসে মেতে আছে সকল স্যার ম্যামরা।যেন মনে হচ্ছিল ওরাই স্যার দের ছাত্র আমরা কিছুই না।
আমি আমার স্যার ম্যামদের সন্মান করি।তারাই আমাদের আদর্শ। তাদের কাছে আমার অনুরোধ..
দোয়া করে ছাত্রছাত্রী দের মাঝে কোন বৈষম্য সৃষ্টি করবেন না। মেধা আল্লাহতালা সবাই কে সমান দেয় না। সবাই তো আর প্লাস পাবে না।
কিন্তু একজন ছাত্র প্লাস পেল না বলে সে কি আপনার ছাত্র নয়?
সে কি কোন শিক্ষা পেল না?
সে কি শিক্ষিত হলো না?
শিক্ষা কাকে বলে স্যার.?
ধরুন আপনি রোদে হেটে হেটে স্কুলে যাচ্ছেন।আপনার পাশে এসে এক এসি মাইক্রো দাড়ালো। জানালার কাচ টা নামিয়ে সালাম দিয়ে বললো স্যার কেমন আছেন। আপনি খুব সহজেই চিনতে পেরেছেন সে আপনার কোন এক ব্যাচের ফাস্ট বয় গোল্ডেন প্লাস পাওয়া ছাত্র রবিন।আজ সে অনেক বড় চাকরী করে। গাড়ি থেকে না নেমেই হাজার টাকা আপনার হাতে জোড় করে ধরিয়ে দিয়ে বলছে.. স্যার ভাল থাকবেন।আসি।
আবার তারপর দিন আপনি একি ভাবে স্কুলে যাচ্ছেন।সামনে থেকে একটা রিক্সা এসে আপনার সামনে দাঁড়ালো।রিক্সা চালক আপনাকে সালাম দিয়ে কেমন আছেন তা জানতে চাইলো ..আপনি খুব কষ্ট করে তাকে চিনতে পারলেন যে সেও রবিনের ব্যাচেরই ছিল কিন্তু ব্যাক ব্রেঞ্চের। লেখাপড়াতে তেমন ভাল ছিল না বলে আজ সে রিক্সা চালক।তারপর রিক্সা থেকে বস্তা জাতীয় কিছু নিচে নামিয়ে রেখে আপনাকে বলছে.. স্যার আপনি এত্তো রোদে স্কুল পর্যন্ত হেটে যাবেন, খুব কষ্ট হবে আপনার। আসুন আপনাকে নামিয়ে দেই।আপনার মত না থাকা সত্তেও আপনাকে জোর করে রিক্সায় তুলে নিয়ে স্কুলে নামিয়ে দিল।আপনি শত চেষ্টা করেও তাকে ভাড়া নেওয়াতে পারলেন না।
দুইটি ঘটনার পর আপনাদের কি মনে হয় স্যার... A+ পেলেই কি সে শিক্ষিত?
সন্মানিত শিক্ষক শিক্ষিকা গণ.. আপনার বিপদে সবার আগে সেই অবহেলিত ব্যাক ব্রেঞ্চের ছাত্ররাই আগে আসবে।আপনাদের সেই আদরের ফাস্ট ব্রেঞ্চে বসা কোন ছাত্র কে পাবেন না। এস এস সি পার করেছি প্রায় ছয় বছর আগে। অনেক দেখেছি।সেই অভিজ্ঞতা থেকেই বলছি..
স্যার,যদি বলা হয় আপনার একটা কিডনি দরকার। না হলে আপনি বাঁচবেন না। তাহলে হয়তো আপনার আদরের ফাস্ট বয় রা টাকা দেবে আপনাকে অনেক।কিন্তু কিনডি খুজে দিবে না। কারন তাদের হাতে ওত সময় নেই। কিন্তু আপনার এই খবর শুনে আপনার ক্লাসের ব্যাক ব্রেঞ্চে বসা কোন অবহেলিত ছাত্র নিজেই তার কিডনি দান করতে রাজি হয়ে যাবে।
স্যার,যদি আপনি বাসে কোথাও যান... তখন আপনার অনেক ছাত্রই আপনার জন্য সিট ছেড়ে দেয়। একটু লক্ষ করে দেখবেন তারা অধিকাংশই ব্যাক ব্রেঞ্চের অবহেলিত ছাত্র।
স্যার,যদি আপনার জন্য কখনো রক্তের দরকার হয়.. তখন আপনার অনেক ছাত্রই ছুটে যাবে রক্ত দিতে। লক্ষ করে দেখবেন তাদের মধ্যে আপনার প্রিয় ফাস্ট ব্রেঞ্চের ছাত্রের মুখ থাকবে না। থাকবে সেই অবহেলিত ব্যাক ব্রেঞ্চার।
তবে নিজেকে সেই ব্যাক ব্রেঞ্চার ভাবতে খুব গর্ব হয়। চাই না আমি সেই প্লাস ডিগ্রিধারী শিক্ষা যে শিক্ষায় শুধু ভাল রেজাল্ট,বড় বড় পদে চাকরি আর বিপুল টাকা পয়সাই থাকে।থাকে না কোন মানবতা,ভক্তি শ্রোদ্ধা আর মানুষের জন্য ভালবাসা।
স্যার... তবুও আপনাদের প্রতি অনেক ভালবাসা আর কৃতজ্ঞতা।আজ জীবনে এতো দূর আসছি তা আপনাদের থেকে পাওয়া শিক্ষা আর দোয়াতেই। আপনাদের কাছে আমরা আজীবন ঋণী।
#আতিকুল ইসলাম লিপু ...... ব্যাকব্রেঞ্চার
Comments
Post a Comment